গরমে হিট স্ট্রোক



ডা. ওয়ানাইজা
       
প্রতিবছর গরম আরো বেড়ে চলেছে। পৃথিবী উষ্ণতর হচ্ছে; কিন্তু মানবদেহে অভ্যন্তরীণভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও শরীর চেষ্টা করে নিজের তাপমাত্রা বজায় রাখতে। তখন শরীর ঘামতে শুরু করে। ঘাম বাষ্পীভূত হয়ে উবে গিয়ে শরীরকে শীতল করে। কিন্তু শরীরে যথেষ্ট পানি সঞ্চিত না থাকলে সমস্যা হয়। আর্দ্রতা বাড়লে শরীর গরম হতে থাকে। ঘামের উবে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শরীর আরো গরম হয়, আর শরীর গরম হলেই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে।

কাদের হিট স্ট্রোক হয়

শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম। তাই এদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। অনেকক্ষণ প্রচণ্ড রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে বা কাজ করলেও হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ ছাড়া কিছু রোগের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি থাকে। এর মধ্যে একটোডার্মাল ডিসপ্লেসিয়াজাতীয় চর্মরোগ, ডায়াবেটিস রোগীদের হিট স্ট্রোকের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া কিছু ওষুধ গ্রহণকারীর ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে, যেমন—অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসপিরিন, মানসিক রোগের ওষুধ। খুব বেশি মোটা হলে কিংবা রোদে বা খুব বেশি তাপমাত্রায় কাজ করতে হলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পরিশ্রান্ত বোধ করা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরতে থাকা, মাংসপেশিতে ব্যথা বোধ করা। এই পর্যায় পর্যন্ত শরীরে তাপমাত্রা ১০৬ ফারেনহাইটের নিচেই থাকে। ঠিক এ সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে উঠে যায়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। হৃদযন্ত্র বিকল হলে রক্তচাপ কমতে থাকে। ফুসফুসে ক্ষতি হওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে। কিডনি কাজ না করায় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হিট স্ট্রোকের কিছু উপসর্গ বিভিন্ন রোগ, যেমন—সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস, সেপটিসেমিয়া, ধুতরার বিষক্রিয়া ইত্যাদির সঙ্গে মিল রয়েছে। তাই হিট স্ট্রোক ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন।

হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন

আগেই বলেছি, হিট স্ট্রোকের উপসর্গ কিছু রোগের সঙ্গে মিলে যায়। চেষ্টা করতে হবে রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

১. রোগীকে গরম স্থান থেকে সরিয়ে ঠান্ডা পরিবেশে আনতে হবে। সম্ভব হলে এয়ারকন্ডিশনও ঘরে রাখতে হবে।
২. যেকোনো উপায়ে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পুরো শরীর পানি দিয়ে মুছতে হবে। প্রয়োজনে ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখতে হবে। সে সঙ্গে ঘরে ফ্যান ছেড়ে রাখা দরকার।
৩. রোগীর নাক-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়।
৪. হাসপাতালে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তা ছাড়া শরীরে পটাশিয়াম কমে যাওয়ায় পটাশিয়াম ও স্যালাইন দেওয়া হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দিতে হবে।

অন্যান্য সমস্যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা হাসপাতালে শুরু করা হয়।

তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, হিট স্ট্রোকের রোগীকে তাপমাত্রা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন দেওয়া হয় না। কারণ, তাতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বাড়ে।

হিট স্ট্রোক কীভাবে এড়াবেন

১. প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।
২. পরিশ্রমের কোনো কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করুন।
৩. সম্ভব হলে খোলা হাওয়ায় কাজ করুন।
৪. ঢিলেঢালা হালকা সুতির পোশাক পরুন।
৫. দিনে দুবার গোসল করতে পারেন।
৬. রোদে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন।
৭. শিশু ও বৃদ্ধরা সতর্ক হন।
৮. প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হন।

লেখিকা : সহযোগী অধ্যাপিকা, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।

bdview24.com

Share on Google Plus

About news zone

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment